শনিবার ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

যুদ্ধে না গেলে সারাজীবন আফসোস থাকত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   137 বার পঠিত

যুদ্ধে না গেলে সারাজীবন আফসোস থাকত

পাক হানাদার বাহিনী যখন এদেশের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় তখন আমি একেবারে বয়সে তরুণ। শরীরে তারুণ্যের আবেশ। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাচ্ছি দেশের সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। পথেঘাটে মানুষের মৃতদেহ পড়ে থাকছে। দেশের এই পরিস্থিতি আমাকে দারুণভাবে পীড়া দিতে শুরু করে। নিজের ভেতর থেকেই যুদ্ধে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করি। আমার বাবা শামসুল হক আমিরুন নেসা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। যখন যুদ্ধ বাধে তখন আমি কমার্স কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র। ওই সময় মুজিব বাহিনীতে যোগ দেই। এরপর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে আমিসহ আমার কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে চলে যাই ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে। যাওয়ার আগে ৭১ সালের মার্চ মাসে হাজী মহসীন রোডে জোয়ার্দার রসুল বাবু, মনিরুজ্জামান মনি (পরবর্তীতে খুলনার মেয়র), মো. আবু জাফর (পরবর্তীতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার), ইকবাল কবির ডালিম, মনু ও আনু একত্রিত হয়ে পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করি। ৪ এপ্রিল গল্লামারীস্থ রেডিও সেন্টার দখলের যুদ্ধে অংশ নেই। এরই মধ্যে পাকসেনাদের তৎপরতা শুরু হলে নিজ গ্রামে ফিরে যাই। যুদ্ধপ্রত্যাশী কয়েকজন যুবককে নিয়ে বনগাঁ সীমান্ত পার হয়ে টালিখোলা ইউথ ক্যাম্পে যোগ দেই। বিএলএফের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে দেরাদুন মিলিটারি একাডেমি টাওয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসি দেশে। এই সময়ের একটি ঘটনা না বললেই নয়। ঝিনাইদহের বর্ডার দিয়ে আমরা দেশে প্রবেশ করি। সঙ্গে ১১ জনের একটি টিম। একটি বাড়িতে রাতে খাবারের জন্য প্রস্তাব দিলে সেটি গ্রহণ করি। বাড়ির মালিক আমাদের বলেন, আপনারা বসেন আমি বাজার করে নিয়ে আসছি। এর কিছুক্ষণ পর একজন নারী এসে আমাদের দ্রুত পালিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। কারণ জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, বাড়ির মালিক মূলত একজন রাজাকার। আপনারা এখানে এসেছেন সেটি মিলিটারিদের জানাতে বাজারে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে গেছেন। পরে আমরা দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে আসি। আমি আজও কৃতজ্ঞতা জানাই ওই অজ্ঞাত নারীকে।

৭১ সালের সেপ্টেম্বরে সপ্তম কোর্সের প্রশিক্ষণ শেষে ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসি। সেখান থেকে মাগুরা মহাকুমার বুনাগাতি বাজারে রাজাকার ক্যাম্প দখলের যুদ্ধে অংশ নেই। নওয়াপাড়ায় মিত্রবাহিনীর সাথে অবস্থান নিয়ে শিরোমণি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। যুদ্ধ শেষে আবার শিক্ষা জীবনে ফিরে যাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে বিএ পাশ করে সোনালী ব্যাংকে যোগ দেই। ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংক থেকে অবসর নেই।

জীবনের শেষ সময়ে এসে এখন আফসোস আর হতাশায় মনটা ভরে যায়। যে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি নেতারা সেই দেশকে গড়ে তুলতে পারেনি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে শুধু নিজেদের পকেট গোছাতে ব্যস্ত হয়েছে। মানুষের কথা বলার অধিকার, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার বারবার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আমার প্রত্যাশা নতুন প্রজন্মের হাত ধরেই দেশ গড়ে উঠবে নতুন আঙ্গিকে।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৫২ এএম | শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(176 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।